যারা পাসপোর্ট করেছেন কিন্তু তাতে কোনো ভুল তথ্য সন্নিবেশিত হলে কীভাবে সংশোধন করতে হবে, তা হয়তো জানেন না। তবে এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। খুব সহজেই আপনি আপনার ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করতে পারবেন।
পাসপোর্টের ভুল তথ্য সংশোধন করতে প্রথমেই আপনার যে বিষয়টি জানতে হবে তা হলো পাসপোর্ট সংশোধন করতে হলে আপনার ইস্যু করা পাসপোর্টে নতুন করে তথ্য সংশোধনের সুযোগ নেই। বরং ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য আপনাকে পুনরায় নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করতে হবে।
আপনার যদি প্রথম করা পাসপোর্টেই ভুল তথ্য আসে তবে সে ভুল তথ্য দেয়া পাসপোর্ট দেখিয়ে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করতে হবে। ভুল সংশোধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে পাসপোর্ট রিনিউ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
অনলাইনে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট https://www.epassport.gov.bd ঠিকানায় পাসপোর্ট রিনিউ করার সুযোগ রয়েছে। ভুল তথ্যের পাসপোর্টটি তৈরি করতে আপনাকে যতটি ধাপ পেরোতে হয়েছে পাসপোর্ট সংশোধনীর জন্য ঠিক ততটি ধাপই আপনাকে পেরোতে হবে।
তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের (অনূর্ধ্ব ১৮ বছর) ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জেএসসি বা জেডিসি বা এসএসসি বা দাখিল বা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বা কারিগরি ও সমমানের যেকোনো একটি সনদপত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া তথ্য সংশোধনের জন্য লিখিত আবেদন ও অঙ্গীকারনামা লাগবে।
আবেদন ও অঙ্গীকারনামার ফরম এই ওয়েবসাইটের ফরম ও ফি অপশনে পাওয়া যাবে। এছাড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেও এই ফরমগুলো পাওয়া যাবে। তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদনকারীকে নিজ হাতে ফরমগুলো পূরণ করতে হবে। এরপর সেগুলো পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় যেসব কাগজপত্র লাগবে
এনআইডি।
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ। জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি জমাদানকারীদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের এনআইডির ফটোকপিও জমা দিতে হবে।
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ। জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি জমাদানকারীদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের এনআইডির ফটোকপিও জমা দিতে হবে।
জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি, দাখিল, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি ও সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদগুলো থেকে যেকোনো একটি সনদপত্র।
অভিবাসীদের ক্ষেত্রে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট বা জব আইডি বা স্টুডেন্ট আইডি কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগবে।
পুরোনো ই-পাসপোর্টের মূল কপি এবং যে পৃষ্ঠাগুলোতে পাসপোর্টধারীর ব্যক্তিগত ও ইমিগ্রেশনের তথ্য দেওয়া আছে সেগুলোর ফটোকপি।
ই-পাসপোর্ট নবায়নের জন্য অনলাইন আবেদনের রঙিন মুদ্রিত কপি|
অ্যাপয়েন্টমেন্টসহ ই-পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদনের সারাংশের মুদ্রিত কপি।
ব্যাংকের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করলে ফি জমার রশিদ।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট অথবা পাসপোর্ট অফিসে প্রদর্শিত নমুনা ফর্মে লিখিত আবেদন ও অঙ্গীকারনামা।
সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সরকারি অনাপত্তি বা অধ্যাদেশ সনদপত্র।
বৈবাহিক অবস্থা সংযোজন, পরিবর্তন বা সংশোধনের ক্ষেত্রে কাবিননামা।
স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন বা সংশোধনের ক্ষেত্রে আপনি যে বাসায় থাকেন তার বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিলের কপি।
যাদের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নেই, তাদের নাম, বয়স, বাবা-মায়ের নাম আংশিক বা সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হলে আদালতের হলফনামা লাগবে।
অনলাইনে আবেদন করবেন যেভাবে : পুরোনো ই-পাসপোর্ট নবায়ন বা সংশোধনের জন্য অনলাইনে ই-পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। দুই ক্ষেত্রেই একইভাবে অনলাইন ফরম পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে আইডি ডকুমেন্টস সেকশনে- Yes, I have an Electronic Passport (ePP) অপশন সিলেক্ট করতে হবে। এরপর পুরোনো ই-পাসপোর্টের তথ্য দিতে হবে। আবেদনের সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, যেন এনআইডিতে দেওয়া তথ্যের সাথে মিল থাকে।
যেহেতু আপনি ই-পাসপোর্ট নিয়েছেন, সেহেতু ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগের ওয়েবসাইটে আপনার নিজস্ব একটি অ্যাকাউন্ট আছে। তাই আগের ইমেইল ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করতে হবে। এরপর ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনে ক্লিক করুন।
এরপর নতুন ই-পাসপোর্ট করার মতো একে একে পাসপোর্ট টাইপ থেকে শুরু করে ঠিকানা পর্যন্ত সব সেকশনগুলো পূরণ করতে হবে। আইডি ডকুমেন্টসে বর্তমান ই-পাসপোর্টের সব তথ্য দেওয়ার পর প্যারেন্টাল ইনফরমেশন থেকে ডেলিভারি অপশন অ্যান্ড অ্যাপয়েন্টমেন্ট পর্যন্ত নতুন ই-পাসপোর্ট আবেদনের মতো করে পূরণ করতে হবে। এরপর পুরো আবেদনপত্র পূরণের পর সাবমিট করুন। এরপর আবেদনের কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন।
সংশোধন ফি : নতুন ই-পাসপোর্টের আবেদনের জন্য যে ফি দিতে হয়েছিল, নবায়ন বা ভুল তথ্য সংশোধনের জন্যও সেই একই ফি। এর বাইরে নাম অথবা বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রে কোর্ট হলফনামা বাবদ দুই থেকে তিন হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে। অবশ্যই জমা রশিদটি নিয়ে আসতে হবে।
৪৮ পাতা ৫ বছর মেয়াদ:
১৫-২১ কার্যদিবসের মধ্যে সাধারণ ডেলিভারিতে ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা।
৭-১০ কার্যদিবসের মধ্যে জরুরি ডেলিভারিতে ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা।
২ কার্যদিবসের মধ্যে অতি জরুরি ডেলিভারিতে ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা।
৪৮ পাতা ১০ বছর মেয়াদ:
১৫-২১ কার্যদিবসের মধ্যে সাধারণ ডেলিভারিতে ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা।
৭-১০ কার্যদিবসের মধ্যে জরুরি ডেলিভারিতে ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা।
২ কার্যদিবসের মধ্যে অতি জরুরি ডেলিভারিতে ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
৬৪ পাতা ৫ বছর মেয়াদ:
১৫-২১ কার্যদিবসের মধ্যে সাধারণ ডেলিভারিতে ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা।
৭-১০ কার্যদিবসের মধ্যে জরুরি ডেলিভারিতে ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা।
২ কার্যদিবসের মধ্যে অতি জরুরি ডেলিভারিতে ফি ১২ হাজার ৭৫ টাকা।
৬৪ পাতা ১০ বছর মেয়াদ:
১৫-২১ কার্যদিবসের মধ্যে সাধারণ ডেলিভারিতে ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা।
৭-১০ কার্যদিবসের মধ্যে জরুরি ডেলিভারিতে ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
২ কার্যদিবসের মধ্যে অতি জরুরি ডেলিভারিতে ফি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা।
আবেদন যেখানে জমা দেবেন : বর্তমান ই-পাসপোর্টটি আপনি যেই অফিস থেকে নিয়েছিলেন, সেই অফিসে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট নিয়ে অনলাইনে পাওয়া নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত থাকবেন। এরপর দায়িত্বরত কর্মকর্তা আপনার কাগজপত্র পরীক্ষা করে আপনাকে একটি ডেলিভারি স্লিপ দেবেন। স্লিপে সংশোধিত পাসপোর্ট সরবরাহের সম্ভাব্য তারিখ উল্লেখ থাকবে। তাই সেটি যত্নসহকারে সংরক্ষণ করুন।
এছাড়া সংশোধিত হয়ে ই-পাসপোর্ট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এলে ওয়েবসাইট থেকেই জানা যাবে। ‘চেক স্ট্যাটাস’ অপশনে গিয়ে অ্যাপ্লিকেশন আইডি অথবা অনলাইন নিবন্ধন আইডি নাম্বার, জন্ম তারিখ এবং ক্যাপচা পূরণ করে চেক-এ ক্লিক করলেই ই-পাসপোর্ট স্ট্যাটাস দেখাবে। ই-পাসপোর্ট তৈরি হলেই লেখা থাকবে Your passport ready for issuance। এরপর আপনি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
সংশোধিত ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ : সংশোধিত ই-পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য আবেদনকারীকে সশরীরে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় ডেলিভারি স্লিপ, এনআইডি এবং পুরোনো ই-পাসপোর্ট লাগবে। আবেদনকারীকে সংশোধিত ই-পাসপোর্ট দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আবেদনকারীর আঙ্গুলের ছাপ যাচাই করে নেবেন। উৎস: সময়নিউজটিভি।