Breaking News

‘বাবা ফোন দেয় না কেন বলে কান্নাকাটি করে মেয়ে’

‘মনিয়াতো ছোট মানুষ। ওইভাবে বোঝে না যে ওর বাবা আর আসবে না। ওই (মনিয়া) বলে শুধু ঈদ আসলে আমার বাবা আসবে। ঈদও আসে না, বাবাও আসে না। সে বাবার কথা বললে আমি কোনো জবাব দিতে পারি না। ও (মনিয়া) বলে আমার বাবা ফোন দেয় না কেন, আমার বাবা আসে না কেন। আমাকে ডাকে না কেন বলে কান্নাকাটি করে।’

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ মাহফুজার রহমান মাহফুজের স্ত্রী নিপা বেগম। বগুড়া সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন কুটুরবাড়ী গ্রামের মৃত মজনু প্রামাণিকের ছেলে মাহফুজার রহমান মাহফুজ।

গত ৫ আগস্ট মাহফুজ গাজীপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার স্ত্রী নিপা বেগম শাশুড়ি কাজল বেগম ও সাত বছরের কন্যা শিশু মনিয়াকে নিয়ে রাজশাহীতে ‘শহীদ পরিবারের প্রতি বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে আসেন। শহীদ মাহফুজের মেয়ে মনিয়া গাইবান্ধায় আত্মীয়ের বাসায় থাকে। সেখানে সানশাইন নামে একটি স্কুলে নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
মাহফুজের স্ত্রী নিপা বেগম বলেন, সেদিন আমার স্বামী দুপুর ১২টায় বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। ৩টা ১৭ মিনিটে আমার কাছে ফোন দিয়েছিলেন। তখন আমি তাকে আসতে বলি বাসায়। ওই আমাকে বলে- তুমি কিছু শুনেছো? আমি বলি শুনি নাই। ও বলে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাইছে। এতে ও (স্বামী) খুশি হয়েছে। ওর সাথে কথা শেষ করে আমি বাইরে আসি। তার একটু পরে তার গুলি লাগে। যারা হাসপাতালে ভর্তি করেছিল তারা ফোন দিয়ে জানিয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, তখন আমরা গাজীপুরে ছিলাম। তখন বাড়ি থেকে বের হয়ে দ্রুত আশপাশের হাসপাতালে গিয়েছি। কিন্তু তাকে খুঁজে পাইনি। সেদিন রাত ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজেছি, কিন্তু তাকে পাইনি। পরের দিন আশপাশের পরিচিত লোক নিয়ে হাসপাতাল খুঁজেছি, তবুও পাইনি। একদিন পর ৬ আগস্ট গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ পাই।

নিপা বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে। একটা মেয়ে আছে। সংসার নিয়ে এখন খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছি। আমি এখন ওইভাবে সংসার গুছিয়ে তুলতে পারিনি। আমার স্বামীর মুদির দোকান ছিল। সেখানে লোকসান হয়েছিল। এরপর আমরা গাজীপুর চলে যাই। সেখানে যাওয়ার পরে ঋণ পরিশোধ করে একটু সচ্ছলতা আসে। আমরা কিছু জমাতে পারিনি। আমার ভাসুর আছে, তবে সেটা আলাদা পরিবার। কেউ তো আর দেখবে না। আমার একটা মেয়ে আছে, এখন কীভাবে চলবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

শহীদ মাহফুজের কাজল বেগম বলেন, আমার ছেলে মারা গেছে। সরকার আমার ছেলের পরিবারকে যেন দেখে। এটাই কামনা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *