সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পরিবর্তন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৩২ বছর। ৩ বারের বেশি কেউ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। যে-সব যুক্তি দিয়ে ৩৫ বয়সসীমা করার দাবি করা হয়েছে তা সাময়িক। অবসরের সময় নিয়ে আমরা কোনো আলোচনা করি নাই। ৩ বারই পরীক্ষা দিতে পারবে। আন্দোলন হতেই পারে, তবে সিদ্ধান্ত আর পরিবর্তন হবে না।’
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর অনুমোদন করা হয়। একই সঙ্গে একজন চাকরি প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ তিনবার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন- ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ফলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সকল ক্যাডারের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারিত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আওতাবহির্ভূত সকল সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ক্ষেত্রে স্ব স্ব নিয়োগ বিধিমালা প্রয়োজনীয় অভিযোজন সাপেক্ষে প্রযোজ্য হবে। প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে স্ব স্ব নিয়োগ বিধিমালা বহাল থাকবে।
অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে ৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ নামের একটি সংগঠন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অন্তর্বর্তী সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় টিমের সমন্বয়ক নোমান বলেন, ‘সরকারের এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। ছাত্র জনতার বিপ্লবের সরকার কেন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিলো তা বোধগম্য নয়। আমরা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি এবং পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই।’
এ সময় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ মেনে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে তিনদিনের আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন তারা।
পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, ‘সরকার পুরোটাই চাপে আছে। বহুমুখী আন্দোলন হচ্ছে।’
জনভোগান্তি এড়াতে আন্দোলনকারীদের শাহবাগের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দীতে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তিনি।
গত ১৪ অক্টোবর এ বিষয়ে গঠিত কমিটি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। সেদিন কমিটির প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, সরকারি চাকরিতে পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩৫ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩৭ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সাধারণ বয়স ৩০ বছর। আর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৩২। তবে একজন পরীক্ষার্থী কতবার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে এ সংক্রান্ত কোনো বিধিনিষেধ বর্তমান নিয়মে নেই।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করতে অনেক দিন ধরে আন্দোলন করছেন চাকরি প্রত্যাশীরা।