Breaking News

মাংস খাননি আড়াইশ দিন, ডালভাতে বাঁচার লড়াই হাজেরার

মাংস খাননি আড়াইশ দিন, ডালভাতে বাঁচার লড়াই হাজেরার
মহাসড়কের ওপর প্রায় ৩০ বছর ধরে কাঁচা ভুট্টা পুড়িয়ে বিক্রি করে দুমুঠো খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন বৃদ্ধা হাজেরা বিবি। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব তুলে নিতে হয় নিজের কাঁধে। এরপর দুমুঠো খেয়ে বাঁচার জন্য মহাসড়কের ওপরই খাবার বিক্রি করা শুরু করেন। বর্তমানে শারীরিকভাবেও অসুস্থ তিনি। চিকিৎসাও করাতে পারেননি হাজেরা। তিনি জানালেন, কোনো মাংস খেতে পাননি ২৫০ দিন থেকে।

হাজেরা বিবির বাড়ি রাজশাহী নগরীর ছোটবগনগ্রাম চৌধুরীপাড়া এলাকায়। তার স্বামীর নাম আমজেদ আলী। তিনি পরিবহন শ্রমিক ছিলেন। ৩০ বছর আগে মারা যান আমজেদ। এরপর থেকে নগরীর শালবাগান মোড়ে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের ওপরেই কাঠের চৌকি নিয়ে বসে কয়লা দিয়ে কাঁচা ভুট্টা পুড়িয়ে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন হাজেরা। এছাড়া শীতের সময় কোনো কোনো দিন ধুপিপিঠা বিক্রি করেন।

এক মাস বয়সে মাকে হারান হাজেরা। এরপর তার বাবা আরেকটি বিয়ে করলেও অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠেন তিনি। তার ২ মেয়ের জামাইও কোনোমতে সংসার চালান। ফলে জামাইয়েরাও সহযোগিতা করেত পারেন না। পরিবার নিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন হাজেরা।

হাজেরা বিবি ঢাকা মেইলকে বলেন, একজন আইসি (এসে) একশডা (১০০ পিস) করে ভুট্টা দিয়্যা যায়, ৩ দিনে বেঁচি; ব্যাঁচার পর ট্যাকা দি। আমার তো কোনো পুঁজি নাই, ট্যাকা কোতি (কোথায়) পাবো? ১০০ ডার দাম লেয় ষুলোষো (১৬০০) ট্যাকা, মানে ষুলো (১৬) ট্যাকা পিচ। আমি একটা বেঁচি ২০ ট্যাকা কর‌্যা। ভুট্টার সাথে ঝাল মশলা ও বিটলবণ দি, কয়লা কিনতে হয়, খরচ বাদ দিয়্যা একটা ভুট্টায় খালি ২-৩ ট্যাকা লাভ থাকে। ৩ দিনে ১০০ ড্যা বেঁচ্যা ২০০-৩০০ ট্যাকা লাভ বাইর (বের) হয়। এড্যা দিয়ে কী খাব বুলো?

তিনি বলেন, সকালে একজনের বাড়িত যায়্যা ঘর মুছি, সকালে অরা খাইতে দেয়। সকালে রুটি খাইয়্যাছি। দুপুরে ইট্টু (একটু) ভাত খানু ভর্তা দিয়্যা। রাইতে ম্যালা দিন না খায়্যাই ঘুমা যাই। বাড়িতে এক মেয়ে, ৫ বছরের নাতি ও নাতনিকে নিয়ে থাকছেন তিনি।

হাজেরা বিবি বলেন, ঘর মুছা কাজ করে মাসে ১ হাজার ট্যাকা পাই। বয়স্ক ভাতা পাই ৩/৪ মাস পর, শ্যাষের বার (শেষবার) দিছে ১৮০০ ট্যাকা। চাল-ডাল কিছুই পাই না। এই শীত চইলি (চলে) গ্যালো, একখান কম্বলও পাইনি, কিচ্ছু পাইনি। রুজার (রোজা) মাসে বেশি কষ্ট হয়। কী কইরি খাব, কে খাইতে দিবে? ছাওয়াল দুড্যা (নাতি-নাতনি) আছে, অরেক ঈদে কিছু দিতে পারি না; আমিও কিছু কিনতে পারি না। ট্যাকা নাই। মাইনষে ফিতরার ট্যাকা দেয়, ওই দিয়্যা ঈদ যায়। নিজের বাড়ি নাই, মাসে ২ হাজার ট্যাকা ঘর ভাড়া দিতে হয়। একটা ঘর ভাড়া লিয়্যা থাকি।

খাওয়া-দাওয়া প্রসঙ্গে হাজেরা বলেন, মাছ-মাংস খাব তো পাব কৈ? মাংস গত কুরবানি ঈদে খায়্যাছি, আর খাইনি। ২ সপ্তাহ আগে ৪০ ট্যাকা দিয়া কিনা খাইছি একটা মিড়ক্যা মাছ। আলু ভর্তা ভাত, আলু ভর্তা ভাত এটাই জুটে শুধু। অসুখ হলে ওষুধ পানি লাগে, চায়া চিন্তে লি। আলসারের সমস্যা আছে, তিনদিন ধইর‌্যা জ্বর, ওষুখ নাই কিনতে পারিনি। ডাক্তারের কাছে যাইত পারিনি।

বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভুট্টা বিক্রি করেন হাজেরা। তার কাছে ভুট্টা খেতে নিয়মিত আসেন পাওয়ার হাউজ মোড়ের এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে আসি, এসে হাজেরা খালার কাছে ভুট্টা কিনে খাই। অনেক দিন থেকে তাকে দেখছি।

রফিকুল হক নামে এক যুবক মোটরসাইকেল থামিয়ে ৫ পিস পোড়া ভুট্টা কিনলেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, চাচির বয়স কম হলেও ৮০ হবে। এই বয়সে বাড়িতে আরাম করার কথা, কিন্তু তিনি রাস্তার ওপর এসে কষ্ট করছেন। এসব মানুষকে সরকারের দেখা উচিত। নেতারাও তো পারে সহযোগিতা করতে। তা করছে না।

রশিদা আক্তার নামে এক নারী ঢাকা মেইলকে বলেন, নারীদের নিয়ে সরকার কাজ করছে। কিন্তু বৃদ্ধাদের নিয়ে কী উদ্যোগ আমরা বুঝতে পারছি না। নাহলে এরকম নারীদের পথে সময় কাটাতে হত না। হাজেরাদের মতো বিধবা বৃদ্ধাদের জন্য সরকারের তরফ থেকে অবশ্যই থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *