অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার পর বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তে কমিটি গঠন করছে সরকার। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটি গঠন করা হবে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কমিটি গঠন করার পরে কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে সে বিষয়ে জানানো হবে। কমিটিতে সদস্য থাকবেন ৫ থেকে ৯ জন।
কিন্তু এর আগে গতকাল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, আপাতত বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো কমিটি গঠন করা হবে না। এ ধরনের কমিটি গঠন করার এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, হাইকোর্টের আদেশ অনুসারেও এটি করার কথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
এরপরই এই স্ট্যাটাসকে নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমজনতা ধিক্কার, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানায়। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার হুমকি দেয়। পরিশেষে আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানায়, ৫ দিনের মধ্যে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
এ নিয়ে নেটদুনিয়ায় এখনও আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। তারা বলছেন, কেনো এ নিয়ে এক উপদেষ্টা আরেক উপদেষ্টাকে দোষারোপ করবে। বিডিআর হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির জন্য কলঙ্ক এক দিন। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পত্যক্ষ ইন্ধনে এ কাজ হয়। কাজেই সব রাজনৈতিক দলের প্রথম দাবি ছিল- আওয়ামী লীগ হটিয়ে যে কেউ ক্ষমতায় আসুক শুরুতেই এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে। তাহলে কেনো বিচার নিয়ে এই দুই উপদেষ্টার দুই কথা।
নেটিজেনরা আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা থেকে সবাই চায়- নির্বাচনের আগে জুলাই-আগস্টের বিচার ও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক। তাহলে বিচার নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কেনো বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে তালবাহানা করছেন। নেটিজেনদের একটি অংশ তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, নাটক কম কর পিও!
শহিদুল আলম স্বপন লেখেন নাটক কম কর পিও! বিডিআর হত্যাকান্ড আমাদের সূর্য সন্তানদের শেষ করে দেশকে হাসিনা ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল, আর আপনারা আসছেন তালবাহানা করে বিচার দেরি করাতে? কি শুরু করেছেন এই জন্য আপনাদেরকে এখানে বসিয়েছিলাম?
মুকিত আহমেদ লেখেন, একটা মাত্র কলঙ্কজনক অধ্যায় যার বিচার হলে অন্যগুলো পানির মতো সহজ হয়ে যায় সেটা হল বিডিআর হত্যাকান্ড ইস্যু, বারবার সময় ক্ষেপণ আর তালবাহানা করে এটাকে পিছিয়ে দেওয়া হয় এজন্য। এর অর্থ কি আমরা এখনো পার্শ্ববর্তী হায়নাদের থেকে মুক্ত হই নাই?
ইফতেখার জামান খান লিখেন, উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর সাহেবের বিরুদ্ধে ‘এভিডেন্স গায়েব করার অভিযোগ’ পুরনো যা বিশ্বাস করতে চাই না, বিডিআর হত্যাকান্ডের ইনভেস্টিগেশন শুনেছি উনিও করেছেন সেই হিসেবে তো ওনার গরজ একটু বেশি থাকা উচিত! তার উপরে উনি আর্মির লোক দরদও বেশি থাকার কথা, কিন্তু ক্ষমতার মসনদে বসে ভুলে গেলেন নাকি? যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ!
মোয়াজ্জেম খান সোশ্যাল মিডিয়া লেখেন, আসিফ নজরুল স্যারের প্রতি আমার অত্যাধিক ভালবাসা শ্রদ্ধা এবং একনিষ্ঠ বিশ্বাস আছে, উনি বিডিয়ার ইস্যু নিয়ে অনেক আগেই বলেছিলেন এর বিচার করতে হবে এবং আমি বিশ্বাস করি উনি সুযোগ থাকলে অবশ্যই তা করবেন। তবে উনার হাত কোন গায়েবি শক্তি বেঁধে রেখেছে কিনা সেটাও চিন্তা করে দেখা উচিত। আমাদের দেশে ডিফেন্স সিভিল এডমিনিস্ট্রেশন পলিটিকাল এস্টাবলিশমেন্ট সব জায়গায় এখনও ভারতীয় ইনফ্লুয়েন্স রয়ে গেছে। কিসের দ্বারা উনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন তা এক্সপোস করা আগে দরকার। ঢালাওভাবে খালি দোষ দিয়ে গেলে চলবে না ওনার জায়গায় আপনাকে বসালে আপনারা কি করতেন হয়তো বহুত আগেই পালাতেন উনি তো এখনো টিকে আছেন।