স্বর্ণের তৈরি গয়নার ক্রেতারা এখন ২২ ক্যারেটের দামি জুয়েলারির পরিবর্তে ১৮ ক্যারেটের সাশ্রয়ী গয়নার দিকে ঝুঁকছেন। মূল্যবান এই ধাতুটির দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর এমন প্রবণতা দেখা দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম বাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত দুবাইয়ের কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, স্বর্ণের অতি উচ্চ মূল্যের কারণে হীরাখচিত গয়নার চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে বড় ধরনের পরিবর্তনের ধারা দেখা যাচ্ছে স্বর্ণের বাজারে।
মাত্র ৬ দিন আগে ২৩ অক্টোবর দুবাইতে ২৪ ক্যারেট মানের প্রতি গ্রাম স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ ৩৩৩ দিরহামে পৌঁছে যায়, যেখানে ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণের দাম ৩০৮ দশমিক ২৫ দিরহামে উঠে আসে। অন্যদিকে ২১ ক্যারেট এবং ১৮ ক্যারেটের দাম গ্রামপ্রতি যথাক্রমে সর্বোচ্চ পর্যায় ২৯৮ দশমিক ৫ এবং ২৫৫ দশমিক ৭৫ দিরহামের মাইলফলক স্পর্শ করে।
দুবাইয়ের স্বর্ণের বাজারে ২২ ক্যারেট মানের ব্যয়বহুল গয়নার জনপ্রিয়তা সব সময় তুঙ্গে থাকে। বিশেষ করে এশিয়ার ক্রেতাদের কাছে এই মানের স্বর্ণের বিশুদ্ধতার জন্য এমন কদর।
সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ডের পর ক্রেতাদের পছন্দের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। ক্রেতারা এখন আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং ওজনে কম এমন সাশ্রয়ী স্বর্ণালঙ্কারের প্রতিও ঝুঁকছেন।
এদিকে, প্রস্তুতকারকরা এখন বাজেট-বান্ধব এবং সাশ্রয়ী গয়না তৈরি করছেন। এদিকে, ভারতীয় উৎসব দীপাবলি এবং ধনতেরাস আসন্ন হওয়ায় দুবাই গোল্ড সুক-এ ক্রেতাদের বিচরণ অনেক বেড়ে গেছে। তিন শতাধিক খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতার পক্ষ থেকে নানা ধরনের অফার এবং মূল্যছাড়ের খবরে সেইসব আউটলেটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে
লিয়ালি জুয়েলারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনুরাগ সিনহা বলেন, ‘স্বর্ণের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৮ ক্যারেটের গয়নার চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে, যা ২২ ক্যারেট বা ২৪ ক্যারেটের তুলনায় সাশ্রয়ী ও সূলভ।
তিনি বলেন, ‘স্বর্ণের রেকর্ড দামের পর ১৮ ক্যারেট গয়না ক্রেতার কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কারণ ব্যয়বহুল স্বর্ণের বাজারে স্থায়িত্ব, বৈচিত্র্যপূর্ণ নকশা এবং নিরাপদ বিনিয়োগের উৎস হয়ে উঠেছে এই ক্যারেটটি।’
বাফলেহ জুয়েলারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিরাগ ভোরা জানান, ১৮ ক্যারেট এবং ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দামে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশের পার্থক্য রয়েছে। একইসঙ্গে ২২ ক্যারেটের চেয়ে ওজনে অপেক্ষাকৃত হালকা হওয়ায় এর চাহিদা এখন তুঙ্গে।
আরাক্কাল গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের পরিচালক আফজাল আরাক্কাল একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘১৮ ক্যারেট গয়নার চাহিদা এখন বাড়ছে, কারণ এটি সাশ্রয়ী, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্বর্ণের পরিমাণ (৭৫ শতাংশ), এবং এর নকশা অনেক আকর্ষণীয় হওয়ায় অনেক ক্রেতার কাছে এটি একটি বিকল্প অর্থনীতি হয়ে উঠেছে।’
বাড়ল হীরার চাহিদা: স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতা স্পর্শের পর হীরার গয়নায় প্রতি ঝুঁকছেন ক্রেতারা। এই শিল্পের শীর্ষকর্তারা জানান, স্বর্ণের উচ্চ মূল্যের কারণে হীরাখচিত গয়নার চাহিদা এবং আকর্ষণও বেড়ে গেছে।